অধিক আয়ের আশায়- ঢাকা শহরে যারা পাবলিক বাস বা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন তারা জানেন এর ‘ঝক্কি’। ঢাকায় এত বছরেও একটা জনবান্ধব গণপরিবহন পদ্ধতি চালু করা যায়নি। গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্যের কাছে সাধারণ মানুষ যে কতটা জিম্মি, তা ভুক্তভোগীরা প্রতিদিন টের পান। এমন বাস্তবতায় এই মহানগরীতে কিছুটা আশার আলো জ্বেলেছে মোবাইল ফোনের অ্যাপভিত্তিক দুটি পরিবহন সেবা।
যার মধ্যে একটি আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত ‘উবার’। যেখানে নিবন্ধনকারী যেকোনও সময় যেকোনও স্থান থেকে অর্ডার করলে তার কাছে হাজির হবে প্রাইভেট কার। একসাথে তিন চারজন কোথাও যেতে চাইলে (ঢাকার মধ্যে) এর চেয়ে ভালো, সাশ্রয়ী এবং আরামদায়ক বাহন আর হয় না।
আরেকটি মোবাইল ফোনের অ্যাপভিত্তিক দেশীয় প্রযুক্তি ‘পাঠাও’। যেখানে ব্যক্তিগতভাবে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা তার মোটরবাইকটিকে নিবন্ধিত করছেন এবং যেকোনও নাগরিক ওই অ্যাপে নিবন্ধন করে উবারের মতো যেকোনও জায়গায় বসে অর্ডার করলে তার সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছে। দ্রুততম সময়ে কোথাও যাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি হয় না। তবে এখানে কেবল একজনই চড়তে পারেন এবং সাথে ভারি ব্যাগ না থাকলে সুবিধা হয়।
তবে বাংলাদেশে ‘উবার’ এখনও আইনি কাঠামোয় আসেনি। এ নিয়ে সরকারের সাথে কর্তৃপক্ষের একটা টানাপড়েন চলছে। এরমধ্যে এসেছে ‘পাঠাও’ রাইড। সরকারের আওতায় না আসলেও দুটি রাইডেই চলছে। আর এসব রাইড শেয়ার অ্যাপগুলো অজস্র কর্মসংস্থান এবং বাড়তি আয়ের সু-ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
এতে করে অনেক বেশি অবদান রেখেছে বেকারদের সাবলম্বী করার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস শুরু হওয়ার পর থেকে নগরীর মানুষদের ভোগান্তিও অনেকটা কমে গেছে। খুব অল্প সময়ে হয়ে উঠেছে অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে রয়েছে জনমনে শঙ্কা।
রবিবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ রাইডারদের নানান অনিয়ম। কোন ধরনের নিয়ম শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করেই রাইড শেয়ার করছে। যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল থামিয়ে ফোন ধরছে যাত্রীদের। এতে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পেছনে থাকা গাড়ি চালকরা।
সজিব রোমান মোটরসাইকেল চালান ১৩ বছর ধরে। তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘রাজধানীতে মোটরসাইকেল এখন অনেক বেশি বেড়েছে। এতো বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ রাইড শেয়ার ব্যবহারকারীরা। কোন ধরনের প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা ছাড়াই তারা রাইড শেয়ার করছে। রাইড শেয়ার করাতে নগরবাসী যেমন উপকৃত হচ্ছে তেমনি সমস্যার মধ্যেও পড়ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঠাও অফিসের এক কর্মকর্তা বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘অর্থ উপার্জনের আশায় গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে বেকার যুবকরা। শুধুমাত্র মাদারিপুরের প্রায় ১২০টি মোটরসাইকেল চলছে পাঠাওতে। তাছাড়া পাবনা ফরিদপুরসহ আরও অনেক জেলার মোটরসাইকেল ঢাকায় এসেছে শুধুমাত্র রাইড শেয়ার করার জন্য।’
গুলশান জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) রফিকুল ইসলাম বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘রাজধানীতে এখন অন্যতম সমস্যা হচ্ছে মোটরসাইকেল। কোনো ধরনের নিয়মই তারা মানে না। তার মধ্যে এই পাঠাও-উবার এসে ঝামেলা আরও বাড়িয়েছে।’
‘যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল পার্ক করা এখন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এসব বিষয়ে মামলা দেই, সেটি ১৪০ অথবা ১৬০ ধারায়। এই ধারার নাম আদেশ অমান্য করা। এটা করেও যদি লাভ না হয় তাহলে মাঝে মাঝে আমরা গাড়ি রেকারে উঠিয়ে দেই।’
তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ‘পাঠাও’ ভাইস প্রেসিডেন্ট কিশোয়ার হাসমি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে শিক্ষানবিশ হিসেবে রাইডারদের রেজিস্ট্রেশন করতাম। এখন আমরা লাইসেন্স ছাড়া করি না। তাছাড়া আমরা আগামীতে পাঠাও রাইডারদের প্রশিক্ষণ দেবো। ইতোমধ্যে আমরা একটা করে হেলমেট দিতে শুরু করেছি যাত্রীদের।’